১ মে ১৮৮৬
সংগ্রামী দিনগুলোর যে তালিকা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে তার মধ্যে মে দিবস
অনন্য। শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ে এই দিন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজ
থেকে ১৩১ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ১৮৮৬ সালে হে মার্কেটের সামনে শ্রমিক
আন্দোলনের সূত্র ধরে বিশ্বব্যাপী এই দিনে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস
হিসাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বতঃস্ফূর্ত ও অসংগঠিতভাবেই অনধিক ১০ ঘণ্টার শ্রমঘণ্টা
নির্ধারণ ও অন্যান্য দাবিতে কয়লা খনি শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শুরু করে।
১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে পেনসেলভেনিয়ার কয়লা খনি শ্রমিকদের সংঘর্ষে ১০ শ্রমিক নিহত হন।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে উল্লিখিত অনধিক ১০ ঘণ্টা শ্রমঘণ্টা
নির্ধারণের দাবিতে শ্রমিকদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের কেন্দ্রস্থল হে
মার্কেটের কাছে পৌঁছলে সৈনিকরা বাধা দেয় এবং সংঘর্ষ বেধে যায়। সৈনিকদের গুলিতে
বহুসংখ্যক শ্রমিক নিহত ও আহত হন। শ্রমিকদের রক্তে ভেজা শার্ট নিয়ে মিছিল এগিয়ে
চলে। আন্দোলন আরও তীব্র রূপ ধারণ করে। শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত শার্ট লাল পতাকায় রূপান্তরিত
হয়। ধর্মঘট ও প্রতিবাদ মিছিল চলে ৫ মে পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ৩ মে ৬ জন এবং ৫ মে আরও ৪
জন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত হন। গ্রেফতার হন শত শত শ্রমিক। পরবর্তীকালে যাদের
অনেককেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেন্ট
লুইস শ্রমিক সম্মেলনে কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে ‘মে দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া
হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নামে খ্যাত কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীদের
প্যারিস সম্মেলনে ১ মে তারিখটিকে দেশে দেশে শ্রমিক-শ্রেণির আন্তর্জাতিক দিবস
হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত না হলেও ১৮৯০ সাল থেকে ইউরোপের দেশে দেশে শ্রমিক-শ্রেণি
১ মে, মে
দিবস পালন করে আসছে। রুশ বিপ্লব, পশ্চিমা দেশগুলোতে সংগঠিত
শ্রমিক আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সম্প্রসারণের ফলে প্রথমে গুটিকয়েক দেশ ১
মে-কে শ্রমিক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে। ভারতে প্রথম মে দিবস
পালিত হয় ১৯২৩ সালে।
আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার
কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোগতা। হে মার্কেটের
হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট
গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যে-কোন আয়োজন হানাহানিতে
পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের
প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
মহান মে দিবসে সকল শ্রেনীর শ্রমজীবী মানুষকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।